গর্ভাবস্থায় কেন দই অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখবেন

গর্ভাবস্থায় দই খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের ও গর্ভস্থ শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। দই একটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য, হজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা গর্ভাবস্থায় অপরিহার্য।

গর্ভাবস্থায় দই খাওয়ার ৮টি প্রধান উপকারিতা

১. শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন উন্নত করে (Calcium Source)

  • দই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, যা শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়, তাই দই খেলে মায়ের হাড়ও শক্তিশালী থাকে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে

2. হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়

  • গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজম হতে পারে।
  • দইয়ের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়

3. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

  • দইয়ের ল্যাকটোব্যাসিলাস ও বিফিডোব্যাকটেরিয়াম ভালো ব্যাকটেরিয়া গঠন করে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
  • এটি সর্দি, কাশি ও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) থেকে সুরক্ষা দিতে পারে

4. গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া কমাতে সাহায্য করে

  • দইয়ে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • এটি প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া (গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ ও প্রোটিন ইউরিয়া) প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

5. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে

  • দই উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
  • এটি অতিরিক্ত ওজন বাড়তে বাধা দেয় এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে

6. মানসিক চাপ ও মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে

  • দই B-ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা স্ট্রেস হরমোন কমায়
  • এটি গর্ভকালীন বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ (Pregnancy Depression & Anxiety) কমাতে সাহায্য করতে পারে

7. শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে

  • দইয়ে প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে ভূমিকা রাখে।
  • এতে থাকা প্রোবায়োটিক শিশুর গাট-হেলথ (Gut Health) উন্নত করতে পারে, যা ভবিষ্যতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

8. গর্ভকালীন সংক্রমণ কমায় ও যোনি সংক্রমণ (Vaginal Infection) প্রতিরোধ করে

  • দইয়ের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া যোনির pH স্তর ঠিক রাখে, যা ইস্ট ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়
  • এটি বিশেষত ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস ও ইউটিআই (UTI) থেকে রক্ষা করতে পারে

গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের দই খাওয়া ভালো?

তাজা ঘরে তৈরি দই – সংরক্ষণকৃত দইয়ের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যকর।
প্লেইন দই (Unsweetened Yogurt) – অতিরিক্ত চিনি না থাকায় ভালো।
গ্রিক দই (Greek Yogurt) – সাধারণ দইয়ের তুলনায় বেশি প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।

কীভাবে গর্ভাবস্থায় দই খেতে পারেন?

🍓 ফল ও বাদামের সাথে – দইয়ে কলা, স্ট্রবেরি, আপেল বা আখরোট মিশিয়ে নিলে পুষ্টিগুণ বাড়বে।
🥣 স্মুদি তৈরি করে – দই, মধু ও ফল মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন।
🍛 রাইতা বা সালাদের সাথে – দই দিয়ে শসা বা অন্যান্য সবজি মিশিয়ে রাইতা বানিয়ে খেতে পারেন।

সতর্কতা:

চিনি ও প্রিজারভেটিভযুক্ত ফ্লেভারড দই এড়িয়ে চলুন।
যদি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা (Lactose Intolerance) থাকে, তবে দই খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত দই খেলে এসিডিটি বা ডায়রিয়া হতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খান (১-২ বাটি প্রতিদিন যথেষ্ট)।

স্তন পান করাচ্ছেন এমন মায়েদের দই খাওয়ার গুরুত্ব

 

 

অনেক সময় দেখতে হয় যে বাবু জন্মের পর বাবুর মা আর আগের মত খেয়াল বা যত্ন পাচ্ছেন না। ব্যাপারটা দু:জনক তবে অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। আবার নতুন বাবুকে নিয়ে অতি মাতামাতির কারণে মায়ের দিকে অনিচ্ছাতেই হয়তো অতটা খেয়াল করা হয়ে ওঠে না। যে কারণেই ব্যাপারটা ঘটুক না কেন, এটা হতে দেয়া খুবই অনুচিত। কেননা মা সুস্থ না থাকলে বাচ্চাও সুস্থ থাকবে না, সঠিক যত্ন পাবে না। কাজেই স্তন পান করাচ্ছেন এমন নতুন মায়েদের শারীরিক যত্নের কোন বিকল্প নেই। 

 

শারীরিক যত্নের কথা উঠলেই প্রথমে আসবে খাবারের কথা। কেননা খাবারের সাথে নিবিড় সম্পর্ক আছে সুস্থতার। সুষম খাবারের পাশাপাশি মায়েদের যত্নে আজ এমন একটা খাবারের কথা বলব যা এক কথায় একটা সুপারফুড। এটা একসাথে আপনাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়, ইনফেকশন থেকে বাচায়, ক্ষয় পূরণ করে এবং দুধের যোগান দেয়। এই সুস্বাদু, সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী খাবারটার নাম হল দই। 

 

আসুন জেনে নিই কিভাবে এটা একজন নতুন মায়ের নানা উপকার করতে পারে। 

 

১. দইয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম নতুন মায়ের হাড় ও দাতের যত্নে অনন্য। তাছাড়া মায়ের দুধের মধ্য দিয়ে এটা বাচ্চাকেও মজবুত দাত দেয়। গর্ভাবস্থায় হাড় ও দাতের যে ক্ষতি হয়েছে নিয়ম করে দই খেলে এর সবটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে। 

 

২. দুধে রয়েছে উচ্চ মাত্রার এমাইনো এসিড ও প্রোটিন। গর্ভাবস্থায় বেশ ধকল যায় মায়ের শরীরের ওপরে। এ সময়ে যে শারীরিক ক্ষয় হয়েছে সেটা পূরণ করতে এই প্রোটিনের ভূমিকা অসামান্য। দেহের পেশীর ঘাটতি মেটাতে এবং অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে দইয়ের এই উপাদানগুলো। 

 

৩. বাচ্চার সাথে স্যাতস্যাতে যায়গায় থাকা, বাচ্চাকে বারবার সাফ করানো, এক জায়গায় অনেক্ক্ষণ ধরে অবস্থানের কারণে অনেক মায়েদের নানারকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দেয়। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক এর কল্যাণে কোন ইনফেকশন হতে পারে না। ফলে মা ও শিশু থাকে নিরাপদ। 

 

৪. দই এ থাকা ভিটামিন বি এবং প্রোবায়োটিক মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। এর ফলে সহজেই নতুন মা কোন ব্যাধিতে আক্রান্ত হবেন না যদি তিনি নিয়মিত দই খান। 

 

৫. বাচ্চা জন্ম দেয়ার পরে অনেক মায়ের নানা রকম খাবারে অরুচি দেখা দেয়। খেয়ে কিছু হজম করতে পারে না। দই খেলে এ সমস্যার সমাধান হবে খুব চমৎকারভাবে। দই এর মধ্যে থাকা প্রোবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের কাজ খুব ভালভাবে করতে সাহায্য করে৷ এর ফলে খাবার হজম হয় খুব ভালোভাবে এবং দই খেলে বুক জ্বালাপোড়া ভাব থাকলে সেটাও কেটে যায় ও অরুচির সমস্যাও দূর হয়ে যায়। 

 

তবে মনে রাখা দরকার যে, খুব ভাল উপকার পেতে চাইলে কিন্তু দই খেতে হবে নিয়ম করে। একটা সময় ধরে খেলে তবেই মিলবে উপকার। 

 

কাজেই ভাল মানের দই কিনে খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত যাতে খেতেও ভাল লাগে আবার পুষ্টিও পাওয়া যায় ষোল আনা। 

 

সন্তানের সঠিক বিকাশে একজন সুস্থ মায়ের অনন্য ভূমিকা রয়েছে৷ কাজেই মায়ের সুস্থতা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করবার কোন বিকল্প নেই। হোক শ্বশুরবাড়ি বা বাবার বাড়ি নতুন মায়ের যত্ন নিয়ে হোক কাড়াকাড়ি। 

 

শুভেচ্ছা। 

শিশুদের মেধা বিকাশে দই এর অনন্য ভূমিকা

 

 

 

যদি জিজ্ঞেস করি আপনার সন্তানকে নিয়ে একটা আশার কথা বলেন। আপনি বলবেন আমার সন্তান যেন মেধাবী হয়। কেননা আজ সারাদেশে, সারাবিশ্বে মেধাবী মানুষদের জয়জয়কার। হুমায়ুন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে হালের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল এবং আরো অনেক আলোকিত মানুষ তাদের মেধা দিয়ে আমাদের দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। 

 

এই মেধার বিকাশের একটা বড় অংশ কিন্তু ঘটে ছেলেবেলায়। বিশেষ করে ২ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। মানুষের ব্রেইনের একটা বড় উন্নতিপর্ব এই সময়টাতে ঘটে যায়। এ সময়টা তাই আপনার সন্তানের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার তাই জানা প্রয়োজন এমন সব খাবার সম্পর্কে যা আপনার সন্তানের মেধা বিকাশের জন্য সহায়ক। সে রকম একটা সহজপ্রাপ্য, সুস্বাদু এবং সাশ্রয়ী খাবার হল দই।

 

মূল আলোচনায় যাবার আগে মেধা নিয়ে একটা পরিস্কার ধারণা নেয়া প্রয়োজন। মেধাবী মানুষ মানে কি সেই মানুষ  যিনি খুব ভাল রেজাল্ট করেন? আসলে কিন্তু তা নয়। মেধাবী মানুষ মানে মানে সেই মানুষ যিনি ধীশক্তিসম্পন্ন, বুদ্ধিমান, প্রত্যুতপন্নমতি এবং বিবেকবান। আর এর সবটাই নির্ভর করে আমাদের মস্তিষ্ক কতটা উন্নত ও ধারালো তার ওপরে।

চলুন তবে দেখি দই এর মধ্যে থাকা নানা খাদ্যোপাদানের মস্তিষ্কের উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবার ক্ষমতা রয়েছে কিনা। 

 

দই এ রয়েছে অতি উচ্চমাত্রার প্রবায়োটিক। এই প্রবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। অন্ত্রের এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের ব্রেইন এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সরাসরি কাজ করে। কাজেই দই খেলে প্রবায়োটিক এর মাধ্যমে ব্রেইন এর ক্ষমতা সংগত কারনেই বেড়ে যায়। 

 

মেধাবী বাচ্চাদের একটা বড় গুন হল মনে রাখতে পারা আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারা। দই এই দুটোই অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে। দই এ আছে ভাল ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের দেহের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে এবং নিউরণগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংযোগ সাধনে ভূমিকা রাখে। এই দুটো ব্যাপার ঘটার মধ্য দিয়ে বাচ্চাদের মনে রাখা ও মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়ে যায়। 

 

দেখেবেন কিছু বাচ্চা একটা কিছু বললে চট করে ধরে ফেলে। এটা করতে পারে তার বেইনের নিউরাল কানেকশন বা আন্ত নিউরণ যোগাযোগ ক্ষমতা বেশি থাকে বলে। ব্যাপারটা অনেকটা সুইচ চাপলে বাতি জ্বলে ওঠার মতো। তো দই এ থাকা এমাইনো এসিড, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি নিউরনের মধ্যকার এ সংযোগ সাধনকে ত্বরান্বিত করে। 

 

মেধাবী বাচ্চারা কেবল মনোযোগী হয় না তারা স্বটা ধরেও রাখতে পারে অনেক্ক্ষণ ধরে। এর একটা কারণ কিন্তু তাড়াতাড়ি ক্লান্ত ও হতোদ্যম হয়ে পড়া। দই  খেলে বাচ্চারা সহজে ক্লান্ত হয় না এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়৷ ফলত তারা মেধাবী হয়ে ওঠে। 

 

অনেক বাচ্চারা দেখবেন অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যায়, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। মেধাবী বাচ্চারা কিন্তু এমন হয় না। তারা ধীরস্থির থেকে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দই আপনার বাচ্চার কর্টিসল হরমোন যা এক ধরনের নারেভাস হরমোন, একে সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার বাচ্চা অযথা প্রেসাব ফিল করে না এবং শান্ত থাকতে পারে। 

 

ছাড়াও নিয়মিত দই খেলে আপনার বাচ্চার সার্বিক দৈহিক ও মানসিক উন্নতি আর দশটা সাধারণ বাচ্চার চেয়ে অনেকাংশেই ত্বরান্বিত হয়। 

 

তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ওপরে বর্ণিত উপকার গুলো কেবল দই খেয়ে পাওয়া যাবে না যদি না পারিপার্শ্বিক স্থবিরতা, আদর্শ শিক্ষণ পরিবেশ, শিক্ষক এবং অভিভাবকের সহায়তা এবং সুশৃংখল জীবনযাপন এর অভ্যাস পাশাপাশি গড়ে তোলা না যায়। 

আপনার বাচ্চার মেধার বিকাশে এ আর্টিক্যালটি সামান্যতম কাজে আসলেও আমরা দারুণ বোধ করব। হ্যাপি প্যারেন্টিং!  

 

এ সংক্রান্ত আরো বিষয়াদি জানতে পড়ুন……

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দই এর অসাধারণ ভূমিকা

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দই এর অসাধারণ ভূমিকা

বাবা মায়ের কাছে সুন্তানের সুস্থ ও নীরোগ দেহের চেয়ে বোধ করি পরম কাঙ্ক্ষিত জিনিস আর দ্বিতীয়টি নেই। সে কারনেই আপনি চান তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেন ইস্পাত দৃঢ় হয়। সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্মগতভাগেই রোগ প্রতিরোধ এর বেসিক সক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছেন। তবে আমরা যদি এর যত্ন না নিই বা একে উন্নত করতে  সচেষ্ট না হই তবে তা আমাদের অনেক ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে হয়তো রক্ষা করতে পারবে না। 

 

তবে আশার কথা হচ্ছে এমন কিছু খাবার আছে সেগুলো যদি আপনার  সন্তানের পাতে দিতে পারেন তবে ওর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হবে অসামান্য। আজ সেরকম একটা খাবারের কথাই বলব। সেটা হল দই সহজলভ্য, সুস্বাদু এবং সাশ্রয়ী। অথচ এমন সব গুণে ভরা যা জেনে আপনি হয়তো  অবাক হয়ে যাবেন। 

 

আসুন তবে জেনে নিই কেন এবং কিভাবে আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দই অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। 

 

১. বিজ্ঞান বলে গাট হেলথ বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকবে। আর দই কে বলা হয় সে অন্ত্রের মন্ত্র। ল্যাকটোবেসিলাস ও বিফিডোবেক্টেরিয়াম নামের দুটো উপকারী ব্যাক্টেরিয়া আছে দইয়ে। এই দুটো ব্যাক্টেরিয়া আপনার সন্তানের অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ সচল রাখে। গবেষণা বলে অন্ত্র ভাল থাকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজে থেকেই ৭০% ভাল থাকবে। এর ফলে দই খেলে পরোক্ষভাবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। 

 

২. দই এ আছে এমাইনো এসিড, প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন ডি এর মত অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। প্রোটিন আপনার বাচ্চার ইমিউনো সেলস এর উন্নতিতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমিয়ে রগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, জিংক এর ক্ষমতা আছে ইনফেকশন কমিয়ে দেয়ার আর তা ঘটে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবার ফলে। 

 

৩. ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা শরীরে ভাল থাকলে সেটা আপনার সন্তানকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা করবে। দই এ থাকা প্রোবায়োটিক প্রদাহ কমিয়ে এনে সংক্রামক রোগ বালাই থেকে আপনার সন্তানকে রক্ষা করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। 

 

৪. আপনি যা খাবেন তা যদি ভালোভাবে শরীরে না প্রবেশ করে বা হজম না হয় তবে কিন্তু সবই গেল! দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্রের কার্যক্রম বাড়িয়ে দিয়ে খাবার হজম করার প্রক্রিয়া সহজ করে দেয়। এর ফলে যেটা হয় সকল খাদ্যোপাদান আমাদের শরীরে সুন্দর করে শোষিত হয় এবং আমরা নীরোগ থাকি। 

 

৫. দইয়ে থাকে ভিটামিন বি ১২। গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন বি রোগ প্রতিরধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে। 

 

৬. দই এ থাকা প্রোবায়োটিক শরীরে থাকা টক্সিন বা বর্জ্য অপসারণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এর ফলে আমাদের বিপাক এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। আর হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। 

 

মোটা দাগে এটা বলা যেতে পারে যে, দই এ থাকা নানা গুরুত্বপূর্ন খাদ্যোপাদান এবং ভাল ব্যাক্টেরিয়া তথা প্রোবায়োটিক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আপনার সন্তানের  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভীষণ দরকারী ভূমিকা পালন করে।    

 

তবে পাশাপাশি এটাও মনে রাখা জরুরি যে সঠিক জীবনাচরণ, ব্যায়াম, নিদ্রা এবং নিয়মানুবর্তিতা ও পরিচ্ছন্নতা না থাকলে কেবল পুষ্টিকর খাবার আপনার বাচ্চাকে নীরোগ রাখতে যথেষ্ট হবে না। এরজন্য দরকার সমন্বিত প্রয়াস৷ তবে দই এর মত খাবারগুলো এ প্রয়াসকে সার্থক করতে পারে অনেকাংশে।