শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা মূলত খাবারে ফাইবারের অভাব, পানিশূন্যতা বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে হতে পারে। এটি শিশুদের অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনাগ্রহ বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে সহজেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব।
১. পানির পরিমাণ বাড়ানো
শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে মল কঠিন হয়ে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
করণীয়:
- শিশুকে পর্যাপ্ত গরম বা কুসুম গরম পানি পান করানো।
- ফলের রস, ডাবের পানি বা স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে।
- ছোট শিশুর জন্য মায়ের দুধ বেশি করে খাওয়ানো।
২. আঁশযুক্ত (ফাইবার সমৃদ্ধ) খাবার খাওয়ানো
ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার হজমে সাহায্য করে এবং মল নরম রাখে।
যেসব খাবার কার্যকর:
- ফল: পাকা কলা, পেঁপে, আপেল, নাশপাতি, কমলা, আঙুর
- শাকসবজি: পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া, গাজর
- ডাল ও শস্যজাতীয় খাবার: ওটস, লাল চালের ভাত, ছোলা, মসুর ডাল
- বাদাম ও বীজ: চিয়া সিড, ফ্লাক্স সিড (তবে ১ বছরের নিচের শিশুকে বাদামজাতীয় খাবার খাওয়ানোর আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত)
৩. গরম দুধ ও মধু খাওয়ানো
গরম দুধ হজমশক্তি বাড়ায় এবং মল নরম করে।
করণীয়:
- এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে (১ বছরের বেশি বয়স হলে)।
- রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়ালে সকালে সহজেই মলত্যাগ হতে পারে।
৪. তেল বা ঘি মেশানো খাবার দেওয়া
তেল ও ঘি প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং মল নরম রাখে।
করণীয়:
- শিশুর খাবারে পরিমিত পরিমাণে ঘি বা অলিভ অয়েল যোগ করা।
- আলু ভর্তা, ডাল বা রুটির সাথে সামান্য তিলের তেল বা সরিষার তেল মিশিয়ে খাওয়ানো।
৫. পাকা কলা ও পেঁপে খাওয়ানো
এই দুটি ফল প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ (মল নরমকারক) হিসেবে কাজ করে।
করণীয়:
- প্রতিদিন ১টি পাকা কলা খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
- পাকা পেঁপে হজমে সাহায্য করে ও মল নির্গমন সহজ করে।
৬. ইসবগুলের ভুষি ব্যবহার করা (বয়স অনুযায়ী)
ইসবগুলের ভুষি মল নরম করে ও সহজে নির্গমন করতে সাহায্য করে।
করণীয়:
- ১ বছরের বেশি বয়সী শিশুর জন্য কুসুম গরম দুধ বা পানির সাথে অল্প ইসবগুলের ভুষি মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
৭. মালিশ ও ব্যায়াম করানো
শিশুর শরীরে হালকা ম্যাসাজ করলে অন্ত্রের নড়াচড়া স্বাভাবিক হয় এবং মল সহজে বের হতে সাহায্য করে।
করণীয়:
- গরম সরিষার তেল বা নারকেল তেল দিয়ে শিশুর পেটে হালকা মালিশ করা।
- শিশুকে হাঁটাহাঁটি বা খেলাধুলা করানো (তাতে অন্ত্রের নড়াচড়া স্বাভাবিক থাকে)
৮. টয়লেট ট্রেনিং ও অভ্যাস গঠন
অনেক শিশু দীর্ঘক্ষণ মল ধরে রাখে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।
করণীয়:
- শিশুকে নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগে উৎসাহিত করা।
- বাচ্চাকে মলত্যাগের জন্য চাপ দিতে বাধ্য না করা, বরং স্বাভাবিকভাবে বসার অভ্যাস করানো।
- টয়লেটের প্রতি ভীতি দূর করতে তাকে ধৈর্য ধরে বোঝানো।
৯. কাঁচা দই বা প্রোবায়োটিক খাবার দেওয়া
দইয়ের ভালো ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও হজমশক্তি বাড়ায়।
করণীয়:
- ১ বছরের বেশি বয়স হলে প্রাকৃতিক কাঁচা দই খাওয়ানো যেতে পারে।
- নিয়মিত দই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমবে।
⚠️ কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন?
যদি –
✅ শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য ৫-৭ দিনেও না কমে।
✅ মলের সাথে রক্ত আসে।
✅ প্রচণ্ড পেটব্যথা বা বমি হয়।
✅ শিশু খেতে চায় না বা সবসময় ক্লান্ত থাকে।
এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শেষ কথা
শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, তবে নিয়মিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে সহজেই এটি দূর করা সম্ভব। পানি, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, ব্যায়াম ও সঠিক অভ্যাস শিশুকে সুস্থ রাখবে।