হৃদরোগ কী এবং এ রোগ কেন হয়

হৃদরোগ কী?

হৃদরোগ (Heart Disease) হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। এটি মূলত হৃদযন্ত্রের রক্তনালীগুলোর (Coronary Arteries) ব্লকেজ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের পাম্পিং ক্ষমতার দুর্ব

লতা বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।

হৃদরোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন—

  1. করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) – হার্টের ধমনী ব্লক হয়ে রক্ত প্রবাহ কমে যায়।
  2. হার্ট অ্যাটাক (Myocardial Infarction) – রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে হয়।
  3. হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা (Heart Failure) – হার্ট দুর্বল হয়ে রক্ত পাম্প করতে পারে না।
  4. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Arrhythmia) – হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বা ধীর হয়।
  5. ভালভের সমস্যা (Valvular Heart Disease) – হার্টের ভালভ ঠিকভাবে কাজ না করলে হয়।

হৃদরোগ কেন হয়?

হৃদরোগ হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো—

১. উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)

  • উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হৃদযন্ত্রকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, ফলে ধমনিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

২. কোলেস্টেরল ও ধমনির ব্লকেজ

  • LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) বেশি হলে এটি ধমনিতে জমে প্লাক তৈরি করে, ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
  • রক্তনালী সংকীর্ণ হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক ও এনজাইনার ঝুঁকি বাড়ে

3. ডায়াবেটিস (Diabetes)

  • ডায়াবেটিস থাকলে রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হার্টের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

4. স্থূলতা (Obesity) ও অতিরিক্ত ওজন

  • বেশি ওজন হলে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পেটের চারপাশে বেশি চর্বি থাকলে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়

5. ধূমপান ও অ্যালকোহল

  • নিকোটিন ও কার্বন মনোক্সাইড ধমনিগুলোর ক্ষতি করে এবং ব্লকেজ সৃষ্টি করে।
  • অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

6. মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ কর্টিসল (Cortisol) হরমোন বাড়িয়ে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন অনিয়মিত করে।
  • দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

7. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা (Exercise-এর অভাব)

  • ব্যায়াম না করলে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং কোলেস্টেরল জমতে থাকে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।

8. জেনেটিক্স ও বয়সজনিত কারণ

  • পরিবারে কারও হৃদরোগ থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়
  • বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধমনিগুলো শক্ত হয়ে যায়, ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে।

উপসংহার

হৃদরোগ প্রধানত উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ধূমপান, মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে হয়। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান পরিহার ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

0 replies

Leave a Reply

Want to join the discussion?
Feel free to contribute!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *