শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপায়: পুষ্টিকর খাবার ও জীবনযাত্রা

 

শিশুর সুস্থভাবে ওজন বৃদ্ধি করা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিশুই স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে বেড়ে ওঠে, যা পুষ্টির অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে হতে পারে। শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য শুধু বেশি খাওয়ালেই হবে না, বরং সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। নিচে কিছু কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো, যা শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।

 

১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো

প্রোটিন শিশুদের পেশি ও টিস্যুর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, যা স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।

যেসব খাবারে প্রোটিন বেশি থাকে:

  • ডিম: প্রতিদিন একটি বা দুটি ডিম খাওয়ালে শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাবে।
  • দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, পনির, ছানা শিশুর শরীরে প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।
  • মুরগির মাংস ও মাছ: উচ্চ প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার শিশুর ওজন বাড়ায়।
  • ডাল ও বাদাম: ছোলা, মসুর ডাল, কাজু বাদাম, আমন্ড ও চিনাবাদাম উচ্চ প্রোটিন ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার।

২. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যুক্ত করা

ওজন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যেসব খাবারে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বেশি থাকে:

  • ঘি ও মাখন: পরিমিত পরিমাণে ঘি বা মাখন শিশুর খাবারে যোগ করলে দ্রুত ওজন বাড়ে।
  • অলিভ অয়েল ও নারকেল তেল: রান্নার সময় এগুলো ব্যবহার করলে শিশুর শরীরে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের যোগান বাড়বে।
  • বাদাম ও বীজ: কাজু বাদাম, আখরোট, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ শিশুর শক্তি ও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

 

৩. কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো

শিশুরা দ্রুত শক্তি ব্যয় করে, তাই তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট অপরিহার্য।

যেসব খাবারে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে:

  • ভাত ও আটার রুটি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাত ও রুটি খেলে শিশুর ওজন বাড়বে।
  • আলু ও মিষ্টি আলু: উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হওয়ায় ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • শাকসবজি ও ফল: গাজর, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কলা, আম, পেঁপে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।

 

৪. বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ানো

কম ওজনের শিশুদের জন্য বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

যেসব খাবারে বেশি ক্যালোরি থাকে:

  • কলার মিল্কশেক বা স্মুদি: কলার সাথে দুধ, মধু ও বাদাম মিশিয়ে খাওয়ালে ওজন বাড়বে।
  • মধু ও খেজুর: সকালে ২-৩টি খেজুর ও ১ চামচ মধু খাওয়ানো যেতে পারে।
  • চিকেন বা ফিশ স্যুপ: এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

 

৫. নিয়মিত ও পরিমিত খাবার খাওয়ানো

অনেক শিশু একবারে বেশি খেতে চায় না, তাই বারবার পরিমিত খাবার খাওয়ানো জরুরি।

  • দিনে ৫-৬ বার ছোট ছোট মিল দেওয়া উচিত।
  • শিশুর প্লেটে সুষম খাবার (প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট) থাকতে হবে।
  • খাবার খাওয়ানোর সময় শিশুর সাথে বসে খেলে সে আগ্রহী হয়ে খেতে পারে।

 

৬. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দেওয়া

শিশুর শরীর হাইড্রেটেড থাকলে তার হজম শক্তি ভালো থাকবে এবং খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে পারবে।

  • দুধ, ফলের রস ও স্মুদি খাওয়ানো উচিত।
  • সাদা পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে।

 

৭. শারীরিক ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

শুধু খাওয়ালেই হবে না, শিশুদের শারীরিক কার্যক্রমও প্রয়োজন।

  • নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করানো: এতে ক্ষুধা বাড়ে এবং খাবার ভালোভাবে হজম হয়।
  • রাতে ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো নিশ্চিত করা: পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

 

শেষ কথা

শিশুর ওজন বৃদ্ধি একটি ধীর প্রক্রিয়া। ধৈর্য ধরে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করলে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

 

0 replies

Leave a Reply

Want to join the discussion?
Feel free to contribute!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *