শিশুদের মেধা বিকাশে দই এর অনন্য ভূমিকা

 

 

 

যদি জিজ্ঞেস করি আপনার সন্তানকে নিয়ে একটা আশার কথা বলেন। আপনি বলবেন আমার সন্তান যেন মেধাবী হয়। কেননা আজ সারাদেশে, সারাবিশ্বে মেধাবী মানুষদের জয়জয়কার। হুমায়ুন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে হালের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল এবং আরো অনেক আলোকিত মানুষ তাদের মেধা দিয়ে আমাদের দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। 

 

এই মেধার বিকাশের একটা বড় অংশ কিন্তু ঘটে ছেলেবেলায়। বিশেষ করে ২ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। মানুষের ব্রেইনের একটা বড় উন্নতিপর্ব এই সময়টাতে ঘটে যায়। এ সময়টা তাই আপনার সন্তানের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার তাই জানা প্রয়োজন এমন সব খাবার সম্পর্কে যা আপনার সন্তানের মেধা বিকাশের জন্য সহায়ক। সে রকম একটা সহজপ্রাপ্য, সুস্বাদু এবং সাশ্রয়ী খাবার হল দই।

 

মূল আলোচনায় যাবার আগে মেধা নিয়ে একটা পরিস্কার ধারণা নেয়া প্রয়োজন। মেধাবী মানুষ মানে কি সেই মানুষ  যিনি খুব ভাল রেজাল্ট করেন? আসলে কিন্তু তা নয়। মেধাবী মানুষ মানে মানে সেই মানুষ যিনি ধীশক্তিসম্পন্ন, বুদ্ধিমান, প্রত্যুতপন্নমতি এবং বিবেকবান। আর এর সবটাই নির্ভর করে আমাদের মস্তিষ্ক কতটা উন্নত ও ধারালো তার ওপরে।

চলুন তবে দেখি দই এর মধ্যে থাকা নানা খাদ্যোপাদানের মস্তিষ্কের উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবার ক্ষমতা রয়েছে কিনা। 

 

দই এ রয়েছে অতি উচ্চমাত্রার প্রবায়োটিক। এই প্রবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। অন্ত্রের এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের ব্রেইন এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সরাসরি কাজ করে। কাজেই দই খেলে প্রবায়োটিক এর মাধ্যমে ব্রেইন এর ক্ষমতা সংগত কারনেই বেড়ে যায়। 

 

মেধাবী বাচ্চাদের একটা বড় গুন হল মনে রাখতে পারা আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারা। দই এই দুটোই অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে। দই এ আছে ভাল ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের দেহের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে এবং নিউরণগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংযোগ সাধনে ভূমিকা রাখে। এই দুটো ব্যাপার ঘটার মধ্য দিয়ে বাচ্চাদের মনে রাখা ও মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়ে যায়। 

 

দেখেবেন কিছু বাচ্চা একটা কিছু বললে চট করে ধরে ফেলে। এটা করতে পারে তার বেইনের নিউরাল কানেকশন বা আন্ত নিউরণ যোগাযোগ ক্ষমতা বেশি থাকে বলে। ব্যাপারটা অনেকটা সুইচ চাপলে বাতি জ্বলে ওঠার মতো। তো দই এ থাকা এমাইনো এসিড, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি নিউরনের মধ্যকার এ সংযোগ সাধনকে ত্বরান্বিত করে। 

 

মেধাবী বাচ্চারা কেবল মনোযোগী হয় না তারা স্বটা ধরেও রাখতে পারে অনেক্ক্ষণ ধরে। এর একটা কারণ কিন্তু তাড়াতাড়ি ক্লান্ত ও হতোদ্যম হয়ে পড়া। দই  খেলে বাচ্চারা সহজে ক্লান্ত হয় না এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়৷ ফলত তারা মেধাবী হয়ে ওঠে। 

 

অনেক বাচ্চারা দেখবেন অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যায়, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। মেধাবী বাচ্চারা কিন্তু এমন হয় না। তারা ধীরস্থির থেকে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দই আপনার বাচ্চার কর্টিসল হরমোন যা এক ধরনের নারেভাস হরমোন, একে সুন্দরভাবে পরিচালিত হতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার বাচ্চা অযথা প্রেসাব ফিল করে না এবং শান্ত থাকতে পারে। 

 

ছাড়াও নিয়মিত দই খেলে আপনার বাচ্চার সার্বিক দৈহিক ও মানসিক উন্নতি আর দশটা সাধারণ বাচ্চার চেয়ে অনেকাংশেই ত্বরান্বিত হয়। 

 

তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, ওপরে বর্ণিত উপকার গুলো কেবল দই খেয়ে পাওয়া যাবে না যদি না পারিপার্শ্বিক স্থবিরতা, আদর্শ শিক্ষণ পরিবেশ, শিক্ষক এবং অভিভাবকের সহায়তা এবং সুশৃংখল জীবনযাপন এর অভ্যাস পাশাপাশি গড়ে তোলা না যায়। 

আপনার বাচ্চার মেধার বিকাশে এ আর্টিক্যালটি সামান্যতম কাজে আসলেও আমরা দারুণ বোধ করব। হ্যাপি প্যারেন্টিং!  

 

এ সংক্রান্ত আরো বিষয়াদি জানতে পড়ুন……

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দই এর অসাধারণ ভূমিকা

0 replies

Leave a Reply

Want to join the discussion?
Feel free to contribute!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *